চলতি মওসুমের মতো শেষ হয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর সু-স্বাদু আম। তাই আমকে কেন্দ্র করে শেষ হতে যাচ্ছে এই বিশাল কর্মযজ্ঞেরও। প্রতি বছর বাংলার মধু মাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত চলে আমের এ মৌসুম।
এ সময়টা চাঙ্গা হয়ে ওঠে রাজশাহীর অর্থনীতি। গ্রামের প্রান্তিক আম চাষি থেকে বেকার যুবক কারোরই ফুরসৎ থাকে না। গতবার বর্ষার আগেই আম শেষ হলেও এবার বাম্পার ফলনের কারণে তা হয়নি।
তবে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই আড়তগুলোতে কমে আসছে আমের পসরা। আমকে ঘিরে কমে যাচ্ছে সেই নির্ঘুম ব্যস্ততা। নেই তেমন বিক্রি-বাট্টা। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে দামও।
তাই বর্তমানে আমের স্বাদ নেওয়ার সাধ্য সাধারণ মানুষের নাগালের অনেকটাই বাইরে চলে গেছে। কুরিয়ার সার্ভিস ও অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে রাজশাহী থেকে দেশের দূর-দূরান্তে আম পাঠানো কমে গেছে।
রাজশাহীতে এবছর আম উঠতে শুরু করেছিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। প্রথমেই বাজারে এসেছিল গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও মোহনভোগ।
পর্যায়ক্রমে বাজারে আসে ল্যাংড়া, আম্রপলি, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ। বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে সুরমাসহ বিভিন্ন জাতের ফজলি। এছাড়া গত দুই দিন থেকে বাজারে এগুলোর পাশাপাশি আশ্বিনা আমও উঠতে শুরু করেছে। তবে টক বলে বিক্রি কম।
এখন রাজশাহীর বাজারে ফজলি আম ৭০ থকে ৮০ টাকা, আম্রপলি (ছোট) ৬০ টাকা, আম্রপলি (বড়) ৮০ টাকা এবং ল্যাংড়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর শালবাগান আমের আড়ৎ থেকে ফরিদুর রহমান জানান, প্রায় প্রতিদিনই কেজিতে ৫/১০ টাকা করে আমের দাম বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, আমের কেনাবেচায় এবং পরিবহন খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে বেড়ে যাচ্ছে আমের দামও।
তাছাড়া আমের মৌসুমও প্রায় শেষ। অল্প কিছু আম আছে রমজান উপলক্ষ করে। রমজানে ফজলি ও আম্রপলির দাম দ্বিগুণ হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত ল্যাংড়া আম যদি পাওয়া যায়, তাহলে দাম ২০০ টাকার বেশি কেজিতে গিয়ে দাঁড়াবে। ফজলি তার চেয়েও বেশি। চলতি সপ্তাহে নগরীর প্রতিটি বাজারে আমের সরবরাহ কমে আসা এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে বলে জানান আম ব্যবসায়ী ফরিদুর রহমান।
নগরীর সুন্দরবন, আহমেদ, এসএ পরিবহন, জননীসহ বেশ কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, আগের মত এখন আর ব্যস্ততা নেই। গ্রাহকদের আম পাঠানো একেবারেই কমে গেছে। ভরা মৌসুমের তুলনায় এখন ১০ ভাগ আমও বুকিং হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো।
এদিকে, রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিম উদ্দিন জানান, এবার প্রচন্ড তাপদাহ, খরা, পোকার আক্রমণ, পুরানো গাছে আম না ধরা এবং হপার পোকার সংক্রমণের কারণে আম উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল। এর পরেও এবার গত বছরের তুলনায় ৪১ হেক্টর বেশি জমিতে আমের আবাদ করা হয়। আর প্রতিকূলতার পরও বাম্পার ফলন হয়েছে।
যা থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বাণিজ্য হয়েছে।
ফলের রাজা আম। আম খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের সব দেশে আম নেই, কিন্তু একবার যে এই আম খেয়েছে তার পক্ষে একে ভোলা সম্ভব নয়।
আমের ইতিহাস
এ ভূভাগের প্রিয় ফল আম বিশ্বের অন্যত্রও নিজেকে বিকশিত করেছে। প্রখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং ৬৩২ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করে তোলেন। মোগল সম্রাট আকবর (১৫৫৬-১৬০৫) ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় এক লাখ আমের চারা রোপণ করে এ উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের আমবাগান সৃষ্টি করে আমকে আরো উচ্চতর আসনে বসান।
জানা যায়, ১৯৪৫ সালের আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মোট আম উৎপাদনের বেশির ভাগ এ দেশে উৎপাদিত হতো। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ আম উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে ছিল। ভারত, মেলাঙ্কা ও ব্রাজিলের পরই ছিল এ দেশের স্থান। এখন বাংলাদেশের স্থান ১৫-১৬টি দেশের নিচে। আম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কৃষক, গৃহস্থর পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আমের প্রচলন হয় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী থেকে এবং চাষাবাদ শুরু হয় আরো পরে খ্রিষ্টাব্দ দশম শতাব্দী দিকে।
বাংলাদেশে আম
বাংলাদেশে যেসব ফল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। আমের নানাবিধ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমাণের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল হিসেবে পরিচিত। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু, আবহাওয়া সবই আমচাষের উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায়ই আম ফলে। এমনকি উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার জুমচাষ এলাকায়ও উন্নত জাতের আম ফলছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, যশোর আমচাষের শীর্ষে অবস্থান করছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী দেশে ৩২ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ৭৮ হাজার ১৯৫ একর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর ফলন হচ্ছে আট লাখ দুই হাজার ৭৫০ টন।
বাংলাদেশে উৎপাদিত আমের মান খুবই উন্নত। এ আম বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে আরব আমিরাত, আবুধাবি, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ফজলি, হিমসাগর এবং ল্যাংড়া জাতের আম রফতানি হলেও আরও অনেক দেশে এর রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
ইংরেজদের আগে পর্তুগিজ আলম থেকে এদেশে শত শত বছর ধরে পশ্চিমারা আমাদের আমলের আমের প্রশংসা করে বিস্তর লেখালেখি করে গেছেন। ওই যে সেই বাদশা অসময়ে আম খেতে চাইলে নিরুপায় হয়ে উজির এক কাণ্ড করেন। কারণ বাদশার আম না খাওয়ালে রোগ সারবে না। বাদশা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে রাজ্যের সর্বনাশ! তাই উজির উপায় না দেখে, নিজের দাড়িতে তেঁতুলের একটু টক ও চিনি মিশিয়ে বাদশাকে চুষতে দেন। ব্যস, বাদশাও দাড়িকে মনে করলেন আমের আঁশ, আর টক মিষ্টি থেকে পেয়ে গেলেন স্বাদ। বাদশার রোগ সেরে গেল, রাজ্যও বাঁচল।
আর ইংরেজ সাহেব এই পাকা হড়হড়ে আম খেতে গিয়ে হাত জামা কাপড় নষ্ট করে ফেললেন। তাই তিনি বললেন, আম খাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো, আমটা নিয়ে বাথটাবে চলে যাওয়া, সেখানে আমটা খেয়ে একেবারে গোসল শেষ করে পরিষ্কার হয়ে চলে আসাই সেরা উপায়। কিন্তু তারাই আবার আমকে বললেন, ‘প্রিন্স অব ফ্রুট’ বা ‘ফলের রাজপুত্তুর’। আর অনেকেই এদেশীয়দের সঙ্গে মনে প্রাণে সায় দিয়ে বলেছেন, আম ফলের রাজা।
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
আরও পড়ুন
-
দেশে অনেক জাতের দুর্লভ আম আর নেই
-
বাংলাদেশের বারোমাসি আম- বারি আম ১১ এর বিশেষ কিছু বিশিষ্ট্য
-
রাজশাহী অঞ্চলে ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে বাগানগুলোতে পচে যাচ্ছে কাঁচা আম
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে আম উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কায় চাষীরা
-
আম গাছে কলা!
-
আম চাষিদের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি ৩শ’ কোটি টাকা
-
আমটির নাম মাহালিশা আম
-
অসময়ের সেরা আম গৌড়মতি
-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমের মুকুলে, ফলন নিয়ে শঙ্কা
-
আমের মুকুল ঝরা সমস্যা ও করণীয় 2020
-
ফলের বাগান করার আগে ও পরে যা করবেন
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাজারজাতকরণে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রনয়ণ’
-
ঝড়বৃষ্টিতে মালদহে ৪০% আম শেষ!
-
ফ্রিজে বছরজুড়ে আম সংরক্ষণের উপায়
-
ভাল আম পেতে যত্ন বছরভর
-
সুস্বাদু ফল আম এবং আমের জানা অজানা উপকারিতা।
-
চাটমোহরে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম লিচুর ব্যাপক ক্ষতি
-
আমগাছে গাছ ভরা মুকুল ভাল ফলন পাওয়ার আশা বাগান মালিকদের
-
আমের তেল mango Oil
-
আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায় 2020
-
ভাল আম চেনার সহজ উপায়
-
আমে ফ্রুট ব্যাগিং এ ব্যাপক সাড়া। রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়ার আশা
-
ধ্বংস করা হলো বিপুল পরিমাণ ফল, আগোরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
-
আম বিতর্ক- বিষ কি শুধু আমে?
-
আম উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির হাতছানি রাজশাহীতে
-
পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ীরা
-
একেক টা আম একফুট, দাম ২০০০ টাকা !
-
রাজশাহীর আম সংরক্ষণ ও বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা
-
বাগানের আম চুরি
-
কালটার রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে আমগাছ
-
‘একগাছের আম’ বিক্রি হলো দেড় লাখ টাকায়
-
রাজশাহীর গাছে গাছে আমের সমারোহ : চাষীদের মুখে হাসি
-
শরীর সুস্থ রাখতে গরমে চুটিয়ে খান কাঁচা আম
-
পাহাড়ে বাম্পার ফলন। ৮০০ কোটি টাকার আম নিয়ে উদ্বেগ
-
মালদহে আমচাষীদের কপালে ভাঁজ
-
রূপচর্চায় আমের ব্যবহার
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে অর্গানিক পদ্ধতিতে আম উৎপাদন
-
হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে আম-লিচুর মুকুলের ক্ষতি
-
৫ বছরে লোকসান ৬০ কোটি টাকা : রাজশাহীতে আমে পচন ধরায় হতাশ ব্যবসায়ী ও মালিকরা
-
নাম ডক মাই আম চাষের পদ্ধতি
-
আমের স্বত্ব নিয়ে নতুন লড়াই দুই বাংলায়
-
০৪ কেজি ওজনের আম ! !
-
পচে গেছে নবাবগঞ্জের ২০০ হেক্টর বাগানের আম
-
শিবগঞ্জে রাসায়নিক মুক্ত আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ শুরু
-
আম খান নিশ্চিন্তে , দূর হবে এই সব সমস্যা !
-
বান্দরবানে আম্রপলি আম চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছে অনেক কৃষক
-
পাকা আম সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
-
হাঁড়িভাঙ্গা...
-
কাটিমন আম ( katimon mango )
-
টবে আম গাছের যত্ন- 2018
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল -
Nice post, very interesting. Good work , If you have…
-
এই আম কোন মাসে পাকে
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
How can this be done?
-
মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
-
হিমসাগর কত করে??
-
5kg am lak ba gser
-
আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
-
খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
-
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
-
চিন্তা করা যায়??
-
কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
-
আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?
