অনাবাদি পাহাড়ি টিলায় সারি সারি আম বাগান। আম্রপালি, রুপালি, মল্লিকা, লেংড়া, গোপালভোগ, মোহনভোগ প্রভৃতি জাতের আম থোকায় থোকায় দোল খাচ্ছে গাছে গাছে। আমের ভারে নুয়ে পড়েছে ডালপালা। রামগড়ের বড়পিলাকে আসাদ গাজীর আম বাগানের দৃশ্য এমনই নজরকাড়া। পাহাড়ে তিনি আম-বিপ্লব ঘটিয়েছেন। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো রামগড়ের পার্বত্য এলাকাকেও আমের জন্য বিখ্যাত করতে চান তিনি।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিকল্পিত চাষ করে বৃক্ষপ্রেমী আসাদ গাজী পাহাড়ে উন্নত জাতের আম উৎপাদনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। আম বাগানের জন্য তিনি শুধু রামগড়ে নয়, গোটা খাগড়াছড়ি জেলায় এখন পরিচিত। সরকারি কোনো সাহায্য-সহায়তা ছাড়া নিজের কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় পাহাড়ের অনাবাদি টিলায় উন্নত জাতের আম চাষে তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। বর্তমান মৌসুমে বাগান থেকে ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন আসাদ গাজী।
রামগড় উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হাফছড়ি ইউনিয়নের বড়পিলাক এলাকায় ১৫ একর টিলাভূমিতে তিনি আম বাগান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে প্রায় আড়াই হাজার ফলন্ত আমগাছ আছে। সব জাতের আমের ফলনই এ বছর ভালো হয়েছে। এক কথায় বাম্পার ফলন। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, আসাদ গাজী ও তাঁর সহধর্মিণী সুফিয়া বেগম শ্রমিকদের নিয়ে গাছ থেকে আম পাড়ছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ৬৮ বছর বয়সী আসাদ গাজী বলেন, 'আমার দুই পুত্র ও এক কন্যার মতো বাগানের প্রতিটি আমগাছও সন্তানের মতো। এগুলোকে লালন-পালন করে বড় করে তোলার পর এখন আমাকে ফল দিচ্ছে।' এ বছর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিটি আম্রপালি গাছে গড়ে ৬০ কেজির মতো আম ধরেছে। অন্যান্য জাতের আমের ফলনও প্রায় সমান। এরই মধ্যে রুপালি ও আম্রপালি তোলা শুরু হয়েছে। খুচরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং পাইকারি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করছেন। খাগড়াছড়ির স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হলেও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাঁর বাগানের সিংহভাগ আম কিনে নিয়ে যান। আসাদ গাজী বলেন, তিনি তাঁর বাগানের আমে ফরমালিন বা কোনো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেন না। বিষমুক্ত হওয়ায় তাঁর বাগানের আমের চাহিদাও বেশি। চট্টগ্রামের আমের আড়তদার আবুল কালাম জানান, আম্রপালি ও রুপালি আম অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর বেশ চাহিদা আছে। তাই তাঁরা আসাদ গাজীর বাগান থেকে প্রতিবছরই আম কিনে নিয়ে যান।
আসাদ গাজী জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথমে এক একর জায়গায় আমের চারা রোপণ করে বাগান করা শুরু করেন। সে সময় রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনি বিভিন্ন জাতের আমের চারা কিনে আনেন। এসব আমগাছে ভালো ফলন পেয়ে পরে অনাবাদি জায়গা কিনে ধাপে ধাপে প্রায় ১৫ একর টিলায় আম বাগান গড়ে তোলেন। প্রতিবছরই তিনি বাগান সম্প্র্রসারণ করছেন। বাজারে আসল জাতের আমের চারা পাওয়া যায় না বলে তিনি নিজেই বড় নার্সারি গড়ে তুলেছেন। নিজের চাহিদা পূরণের পর নার্সারি থেকে চারাও বিক্রি করেন। বাগানে সেচ দেওয়ার জন্য টিলার ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করেছেন। পাম্পের মাধ্যমে বাগানে সেচ দেওয়া ছাড়াও এ জলাশয়ে মাছের চাষও করেন তিনি।
আম চাষে তাঁর সাফল্য দেখে আশপাশে অনেকেই ছোট ও মাঝারি আকারে আম বাগান করেছেন বলে জানান আসাদ গাজী। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে তাঁর বাগান দেখতে আসেন। পাহাড়ে এ ধরনের ফলের বাগান করার জন্য সবাইকে তিনি উৎসাহ জোগান। তাঁর উৎসাহে গত কয়েক বছরে রামগড় ও এর আশপাশের এলাকায় প্রচুর আমের বাগান হয়েছে। ফলনও হচ্ছে আশাতীত। কিন্তু হিমাগার না থাকায় চাষিরা কম দামে ফল বিক্রি করতে বাধ্য হন বলে খাগড়াছড়িতে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিশেষ করে জুস তৈরির কারখানা স্থাপনে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান আসাদ গাজী।
রামগড় পাহাড়ি অঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জুলফিকার আলী ফিরোজ বলেন, আসাদ গাজীর মতো পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের পাহাড়ি টিলায় ফল বাগান করা উচিত। জুম চাষ, হলুদ, আদা, কচু কিংবা কাসাভা আলু চাষ না করে আম, কাঁঠাল, লিচুর বাগান গড়ে তুললে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তিনি আরো বলেন, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া বিভিন্ন জাতের আম ও লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আসাদ গাজীর মতো যাঁরাই ফল চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন, সবাই সফল হয়েছেন।
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
আরও পড়ুন
-
পাঁচ বছরে লোকসান ৬০ কোটি টাকা : পুঠিয়ায় পচন রোগে হতাশ আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজার কোটি টাকার আম ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে
-
বারোমাসি আমের চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে কি করবেন
-
চার দিনে ১৫৯টি আমের চারা নষ্ট, বাগান নিয়ে উদ্বেগে চাষিরা
-
বাচ্চাদের জন্য আমের সহজ রেসিপিগুলি
-
আম রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা ভিয়েতনামের
-
কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনার অজানা কিছু নতুন পদ্ধতি
-
আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য করনীয়
-
৩৪ বছর ধরে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আম গবেষণা কার্যক্রম
-
আম বালাইয়ের ঝুঁকি কমায়
-
আম গাছের মুকুল ঝরা সমস্যা ও করণীয় > ২০২০ আপডেট
-
আম বাগানে রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
-
তালায় আমের মুকুল পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা
-
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আম বাগানে থাকবে পুলিশ
-
আম প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনে জোর দিতে হবে
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যানানা আম-জাতটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
-
কাটিমন আম ( katimon mango )
-
হানিফ সংকেত এর কলাম: আম- পরিমাণ ও পরিণাম
-
টক আমগাছকে মিষ্টি গাছে রূপান্তরকরণ
-
বৃষ্টিতে আম উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় চাঁপাইয়ের চাষীরা
-
আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় ও সার ব্যবস্থাপনা ২০২০
-
আম গাছে গুটি কলম করবো কিভাবে
-
নওগাঁয় আবাদী জমিতে গড়ে উঠছে আম বাগান
-
চাহিদা বাড়ছে রাংগোয়াই আমের
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার করা হবে- জেলা প্রশাসক
-
কাঁচা আমের তিনটি আচার
-
এবছর সাতক্ষীরায় আমের দাম
-
আমের হরেক পদ
-
আহা, কি যে শান্তি! কত্তদিন পর নিজের হাতে আম পেড়ে খাইলাম।
-
সাধারণ চাষীরা নয়, আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট
-
পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নত জাতের আমের চাষ
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা
-
কাটিমন আম কি কেমন বিস্তারিত
-
দিনের কোন সময়ে আম খাবেন
-
আম সম্পর্কে ১৩টি অজানা মজাদার তথ্য
-
আম বাগান পাহারা দেবে পুলিশ
-
ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ
-
লাভ বাড়াতে মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করছেন মালদহের আম ব্যবসায়ীরা
-
গাছে গাছে শুধু আম আর আম
-
মৌসুমের শুরুতে আম গাছে করনীয়
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'আম কেন্দ্রিক' শিল্প কারখানা দরকার
-
ফরমালিন দেয়া ভারতীয় পাকা আমে বাজার সয়লাব
-
কাঁচা আম কেন খাবেন
-
আম পাতার ১০টি বিস্ময়কর ঔষধি গুনাগুণ
-
আমের হাজারো বাহারি নাম
-
বালিয়াডাঙ্গীর প্রাচীন আম গাছটির দর্শনী ১০ টাকা
-
ফরিদপুরে বারি আম চাষ শুরু
-
হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে আম-লিচুর মুকুলের ক্ষতি
-
যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হচ্ছে কানসাটের রাসায়নিকমুক্ত আম
-
অসময়ে বৃষ্টি, আমের মুকুলে রোগ
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল -
Nice post, very interesting. Good work , If you have…
-
এই আম কোন মাসে পাকে
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
How can this be done?
-
মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
-
হিমসাগর কত করে??
-
5kg am lak ba gser
-
আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
-
খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
-
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
-
চিন্তা করা যায়??
-
কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
-
আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?
